ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে নাগরিকদের নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:১২ এএম

ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারে নাগরিকদের নিন্দা

 

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ ধরনের অপপ্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁরা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন তাঁরা।  

বিবৃতিতে তাঁরা অভিযোগ করেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জাতীয় পুনর্গঠন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এসব গণমাধ্যমকে তাঁরা ভারতের উগ্র ডানপন্থী শাসক দল বিজেপির স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও বর্তমান প্রেক্ষাপট  
বিবৃতিতে নাগরিকেরা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ও ভারতের সহযোগিতায় দেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বৈরশাসন ও লুটপাটের রাজত্ব চলছিল। তবে, গত জুলাই-আগস্ট মাসে গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের জনগণ সেই শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তাঁরা দাবি করেন, এই আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।  

নাগরিকেরা জানান, এখন বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশকে বিভাজিত করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় ‘গদি মিডিয়া’ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।  

 

ভারতীয় অপপ্রচারের উদ্দেশ্য  
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত ক্র্যাকডাউনের গল্প প্রচার করছে, যা মূলত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক। এসব অপপ্রচারের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনাস্থা সৃষ্টি করা, জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় পুনর্গঠনের পথে বাধা দেওয়া।  

তাঁরা অভিযোগ করেন, যখন ভারত সরকার গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে নিজেদের আশ্রয়ে রেখেছে, তখন ভারতীয় ‘গদি মিডিয়া’ নজিরবিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।  


বিবৃতিতে নাগরিকেরা বাংলাদেশের বৈচিত্র্যকে দেশের অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁরা স্মরণ করিয়ে দেন, গত গণ–অভ্যুত্থানে দেশের সব জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ একত্র হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। এই ঐক্যের মাধ্যমেই দেশ স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।  

 

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান  
বিবৃতিদাতা নাগরিকেরা দেশবাসী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান, বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তাঁরা বলেন, জাতীয় ঐক্য ধরে রাখাই এখন দেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।  

 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা  
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ৫৩ জন নাগরিকের মধ্যে আছেন শহিদুল আলম, মোস্তফা নাজমুল মানসুর, লতিফুল ইসলাম, সুমন রহমান, জিয়া হাসান, মারুফ মল্লিক, বখতিয়ার আহমেদ, কাজল শাহনেওয়াজ, হাসান আশরাফ, আহমাদ মোস্তফা কামাল, সায়েমা খাতুন, স্বাধীন সেন, সাইমুম পারভেজ, পাভেল পার্থ, বীথি ঘোষ, মাহবুব সুমন, ওমর তারেক চৌধুরী, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আ–আল মামুন, সুস্মিতা চক্রবর্তী, মোশরেকা অদিতি হক, আর রাজি, মাহাবুব রাহমান, তুহিন খান, মিছিল খন্দকার, ইসমাইল হোসেন, নাহিদ হাসান, গাজী তানজিয়া, কাজী জেসিন, মৃদুল মাহবুব, ফেরদৌস আরা রুমী, মো. হাবিব জাকারিয়া, শাহতাব সিদ্দিক অনিক, ইমরুল হাসান, শাহনাজ মুন্নী, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, মিশায়েল আজিজ, সৈয়দ মুনতাসির রিদওয়ান, পারভেজ আলম, আরিফ রহমান, মোহাম্মদ রোমেল, কামরুল আহসান, জিয়া হাশান, আলতাফ শাহনেওয়াজ, শরত চৌধুরী, বায়েজিদ বোস্তামী, পার্থিব রাশেদ, দীপক কুমার গোস্বামী, জি এইচ হাবিব, আবুল কালাম আল আজাদ, আলমগীর স্বপন, সারোয়ার তুষার ও এহসান মাহমুদ।

 

বিবৃতিতে তাঁরা দেশের গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ যেন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ যেন সঠিকভাবে এগিয়ে চলে, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।  

এই পরিস্থিতিতে ভারতের উগ্র ডানপন্থী মিডিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাকে অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।