ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ঢাকা সফরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে দুই দেশের সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি বলেন, “আমাদের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতেই হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। আমরা এটাকে দুই দেশের জন্যই উপকারী মনে করি।” তিনি জানান, ভারত দুই দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে চায় এবং যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকেই এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
৪০ মিনিটব্যাপী আলোচনায় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, অপপ্রচার প্রতিরোধ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, ভারতের আশ্রয়ে থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণজাগরণের মতো বিষয় উঠে আসে।
অধ্যাপক ইউনুস জানান, ৫ আগস্ট থেকে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনার বক্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করছে। তিনি মিশ্রিকে বলেন, “তার বক্তব্য অনেক সময় উত্তেজনা বাড়ায়। আমাদের জনগণ এ নিয়ে চিন্তিত।”
জুলাই-আগস্টের গণজাগরণের প্রসঙ্গে মিশ্রি জানান, তিনি সেসময় বাংলাদেশের ঘটনাগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। অধ্যাপক ইউনুস বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত হাসিনা সরকারের পতনে ছাত্র, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের ঐক্য ভূমিকা রেখেছে। “তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এটি নতুন বাংলাদেশের পথচলা,” বলেন ইউনুস।
তিনি সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম এবং দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধ্যাপক ইউনুসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে মিশ্রি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ভারতের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় আলাদা। আমাদের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়, এটি সবার জন্য।”
অধ্যাপক ইউনুস বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি সার্ক পুনরুজ্জীবনে ভারতের সহযোগিতা চান। মিশ্রি জানান, ভারত সার্কে যুক্ত থাকতে আগ্রহী, তবে কিছু বাধা রয়েছে।
অধ্যাপক ইউনুস প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথা জানান। মিশ্রি জানান, গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, “আমরা সবার জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।” মিশ্রি একমত প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে পারব।”
এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যেখানে পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।